থার্টি ফার্স্ট নাইট সম্পর্কে ইসলাম কি বলে বিস্তারিত জানুন

গত কয়েকশ শতাব্দি আগে থেকে দেখতে পাচ্ছেন যে ইংরেজি নববর্ষকে খ্রিস্টানরা বিশেষভাবে গুরুত্ব সাথে উদযাপন করে আসছে। এখন আর সেটি খ্রিস্টানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই সকল ধর্মের মানুষ তা পালন করছেন। আমাদের আজকে জানার বিষয় যে থার্টি ফার্স্ট নাইট সম্পর্কে ইসলাম কি বলে।

থার্টি-ফার্স্ট-নাইট-সম্পর্কে-ইসলাম-কি-বলে-বিস্তারিত-জানুন

থার্টি ফার্স্ট নাইটকে ঘিরে কোন আনন্দ, উল্লাসউ বা কোন আয়োজন ইসলাম সমর্থন করে কিনা বা একজন বিবেকবান মানুষ থার্টি ফার্স্ট নাইট পালন করতে পারবে কিনা তা নিয়ে আজকের পূর আর্টিকেল জোরে আলোচনা করব।

সূচিপত্রঃ থার্টি ফার্স্ট নাইট সম্পর্কে ইসলাম কি বলে 

থার্টি ফার্স্ট নাইট সম্পর্কে ইসলাম কি বলে বিস্তারিত জানুন 

থার্টি ফার্স্ট নাইট আসলে আমরা সবাই মেতে উঠি এটা কে আমরা আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে উদযাপন করে থাকি। জীবনের সকল নতুন আমাদের আনন্দ দেওয়ার কথা না। একজন মৃত্যু দন্ড মানুষ বা অসুস্থ মানুষ মৃত্যু দেখে অগ্রসর হচ্ছে তার জন্য নতুন কোনদিন আনন্দের নয়। একজন বিবেকবান মানুষ কিন্তু উৎসব, আনন্দ করার কথা নয়। তোমার এইসব লোকগুলোর মতো হয়েও না আল্লাহ তায়ালাকে ভুলে গেছেন। তাদের জীবনে কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ, কোনটা করা উচিত আবার কোনটা করা উচিত নয় তাদের মধ্যে নাই। তাই নতুন একটি বছর আমাদের জন্য আনন্দের নয়। হাদিসে বলা আছে, যে জাতি কোন অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ অন্তর্ভুক্ত হবে। 

আমার যদি তাদের উৎসাহ অনুসরণ করে থাকি তাহলে আমার তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাচ্ছি। আজকের মুসলমান বিশ্বে কোনো কাজ করার আগে ভাবে না কোনো করছি, এটা করার পিছনে কি কারণ আছে।  আখিরতে যখন আল্লাহ তায়ালা হিসাব নিবেন তখন কি এটি নেক আমলের পাল্লায় উঠবে নাকি গুনাহের পাল্লায় উঠবে এই হিসাব টুকু করি না আমার। মুসলমানদের জন্য আল্লাহ তা'আলা দুইটি উৎসব দিয়েছেন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। একজন মুসলিম হিসেবে ইসলাম আমাদেরকে সুন্দর যে আদর্শ দিয়েছে সেই জীবন আদর্শের আলোকে মুসলিম ধর্মের এবং ভিন্ন ধর্মের মানুষদের এবং যারা আল্লাহকে ভুলে আছেন সেসব পাপীদের পথে আমরা যুক্ত হতে পারি নাই। 

যোগাযোগের মাধ্যমে জানতে পারি যে বিভিন্ন দেশে থার্টি ফার্স্ট নাইটের জন্য হাজার হাজার টাকা লেনদেন করা হয়। অর্থের অপচয় ও খরচ করে থাকে, যেদেশে এখনো খাবার না খেয়ে থাকে, কষ্ট থাকে এবং চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করে। সেই দেশের শত শত লাখ টাকা খরচ করেন থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করার জন্য। এটা কে মূর্খতা জাহেলের যুগ ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে। যারা আল্লাহ তালাকে ভুলে আছেন যে সমস্ত পাপীদের পথে আমরা পথচার করতে পারি না এটা ইসলাম অনুমোদিত করে না।

থার্টি ফার্স্ট নাইট কি 

থার্টি ফার্স্ট নাইট হলো ইংরেজি বা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখ। থার্টি ফার্স্ট নাইট বা নতুন বছর হিসেবে উদযাপন করা হয়। এটি মূলত পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন হিসেবে পরিচিতি। তবে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এই উদযাপনকে বিধর্মীদের উদযাপন ও অপসংস্কৃতি হিসেবে গণ্য করা হয়। এই অনুষ্ঠান বা সংস্কৃতি মুসলমানদের জন্য নয় এই উৎসব ও প্রচার করা হয়েছে বিধর্মীদের জন্য। তাই মুসলিম সমাজে এ ধরনের উদযাপন সমর্থনযোগ্য নয় ইসলাম।

থার্টি ফার্স্ট নাইট ইসলামে উদযাপন করা কি বৈধ

থার্টি ফার্স্ট নাইট সম্পর্কে ইসলাম কি বলে থার্টি ফার্স্ট নাইট ইংরেজি নতুন বছরের রাত মূলত খ্রিস্টান সংস্কৃতির একটি অংশ। এটি ইসলামের কোন সংস্কৃতি নয় মুসলিম সভ্যতা ও সংস্কৃতির দৃষ্টিতে এটি একটি অপসংস্কৃতি। তাই একজন সচেতন ও ঈমানদার মুসলমান কখনোই থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে পারে না। ইসলামি স্কলাররা একমত যে থার্টি ফার্স্ট নাইট যেহেতু খ্রিস্টান সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই এটি মুসলমানদের জন্য হারাম। অন্য ধর্মের সংস্কৃতি উৎসব মুসলমানদের জন্য পালন করা বৈধ নয়। কুরআন ও হাদিস উভয় ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেছেন "যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মে অনুসরণ করবে তার সেই আমল কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্তের অন্তর্ভুক্ত হবে"। 

আরো পড়ুনঃ হিজরি ও গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের পাথক্য 

মুসলিমদের উচিত নিজেদের সংস্কৃতি ও ধর্ম নির্দেশনা মেনে চলা অন্য জাতির রীতিনীতি অনুষ্ঠান অংশগ্রহণ করা মানে তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যায় ঈমানের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন সাধারণত রাতভর নাচ গান আনন্দ উল্লাস অশ্লীলতা ও নেশাগ্রস্ততার মাধ্যমে সারারাত কাটানো হয়। ইসলাম রাতকে ইবাদতের সময় হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। এ সময় আল্লাহ তায়ালা শেষ আসমানে নেমে আসে এবং বন্দাদের দোয়া কবুল করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন "প্রতি রাতে আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহবান করেন: কে আছো আমার কাছে দোয়া চাইবে, আমি তার দোয়া কবুল করবো, কে আছো আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করবো। 

 কিন্তু এই বরকমতময় সময়ে মানুষ যদি ইবাদত এর পরিবর্তে অশ্লীলতা ও নেশাগ্রস্ততার মধ্যে ডুবে যায় তবে তা একটি মারাত্মক গুনাহ। থার্টি ফার্স্ট নাইট সম্পর্কে ইসলাম কি বলে ইসলাম আমাদের বলেছেন মুমিন মুসলমান কখনো অন্য জাতির রীতিনীতি অনুসরণ করতে পারে না। আমাদের কর্তব্য হলো কুরআন সুন্নাহ  অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। ইবাদতের মাধ্যমে বছরের শেষ ও শুরুতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও কল্যাণ প্রার্থনা করা একজন মুসলমানের জন্য করণয় যে বিষয়টি ফাস্ট নাইট থেকে বিরত থাকা ইসলামিক বিধান মেনে চলা রাত্রিতে এবাদত দোয়া ও আত্মসমালোচনার মাধ্যমে কাটানো একজন প্রকৃত মুসলমানের কাজ ঈমান সুরক্ষিত রাখা।

 থার্টি ফার্স্ট নাইটের উৎস কোথায়? কোথা থেকে এসেছে 

থার্টি ফার্স্ট নাইট প্রথম যে দেশের শুরু হয়েছিল বর্তমানে আমরা যেটা রোমান বা ইতালি নামে চিনি সেই দেশের মূল ধর্ম হলো তারা মূর্তি পূজা করতো। এ রোমানদের একটি বড় মূর্তি ছিলো যারা এই মূর্তিটি কে ভাগ্য দেবতা হিসেবে মানতো। এবং সেই মুহূর্তটির নাম ছিল জানোস এবং জানোসের দুইটি মাথা ছিল। থার্টি ফার্স্ট নাইট রাতে রোমানরা যা করতো ১২ টার আগে মূর্তির যে পেছনের মাথাটা আছে সেজদার লিপ্ত হয়ে থাকতো ।

এবং তারা ভাবতো এবং বিশ্বাস করতো বিগত বছরে যতো ভালো কাজ হয়েছে সব এই জানোসটিকে খুশি রাখার জন্য হয়েছে। যখন রাত ১২ টা হয় ১ মিনিট হয়ে যেত তখন তারা ঘুরে সামনের দিকে করে রাখত মূর্তিটা। মূর্তিটা সেজদার লিপ্ত হয়ে থাকতো এবং তারা ভাবতো আগামী সারা বছর তাদের ভালো কাটবে, ভালো হবে ও অনেক ভালো ভালো কাজ করতে পারবে। এই ভেবে তারা জানোসের পূজা করতো। 

থার্টি ফার্স্ট নাইট বিভিন্ন দেশে কিভাবে উদযাপন করেন 

থাইল্যান্ডে থার্টিফার্স্ট নাইট পালন করা হচ্ছে একে অপরকে পানি মেটানোর মাধ্যমে। স্প্যানে এই থার্টি ফার্স্ট নাইট রাতটি তারা উদযাপন করে আঙ্গুর বা আঙ্গুরের জুস খেয়ে। কোরিয়ার মধ্যে এই রাতটি তারা না ঘুমিয়ে আনন্দ উল্লাস বিভিন্ন ধরনের আতশপাতি এগুলো দিয়ে আনন্দ করে তারা উদযাপন করেন। ম্যাক্সিকো ঠিক ১২ টার সময় ম্যাক্সিকোতে একটি ঘন্টা বাজানো হয় এবং এই ঘন্টার মাধ্যমে ম্যাক্সিকো বাসিন্দা দ্বারকে জানানো হয় একটি বছরকে বিদায় দেওয়া হয় এবং আর একটি বছরকে স্বাগত জানানো হয়। আর আর্জেন্টিনারা যেভাবে থার্টি ফার্স্ট নাইট পালন করেন পরিবারের সদস্যরা একসাথে থাকেন এবং ১২ টা বাজার সাথে সাথে একসাথে খাবার খাওয়া শুরু করেন। 

আরো পড়ুনঃ ২০২৬ সালে কত তারিখে শবে বরাত 

এবং তারা এটার মাধ্যমে বোঝায় যে আত্মীয়তার যে বন্ধনটা আছে তা ঠিক থাকে। থার্টি ফার্স্ট নাইট ডে ব্রাজিলরা সবাই সাদা পোশাক পড়ে উদযাপন করেন। সাদা পোশাক পড়ার মানে তারা বোঝায় যে আমাদের পোশাক ও সাদা এবং আমাদের মনটাও সাদা। আমাদের বাংলাদেশ যেটা বিশ্বের মধ্যে দুই নাম্বার মুসলিম কান্ট্রি হিসেবে পরিচিত। এই দেশে বারোটার পর যারা ঘুমিয়ে থাকে তা ঘুমিয়ে থাকে তার ঘুমাতে পারে না। বিভিন্ন ধরনের আতশবাজি নাইট ক্লাবে নাচগান করেন এবং ঘরের মধ্যে পরিবারসহ ডিজে পার্টি করে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করেন বিশেষ দ্বিতীয় নাম্বার মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ হয়।

মুসলিমরা কিভাবে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করবে 

মুসলিমরা কিভাবে থার্টি ফার্স্ট নাইট রাতটি পালন করবেন তা নিয়ে আলোচনা করবো। এই রাতটি মুসলমানদের জন্য শোকের রাত। কারণ আমাদের জীবন থেকে একটি বছরকে হয়ে ফেলেছি এটা কি মুমিন ভাই ও বোনদের জন্য কি শোকের রাত নয়। এই এক বছরে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্য কে কয় ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে পেরেছি, আমাদের বাবা মার প্রতি যে হক ছিল এবং সন্তানদের প্রতি আমাদের যে হক ছিল তাদেরকে ঠিকভাবে দিতে পেরেছি কিনা। এসব চিন্তা করে আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা চাওয়া, মাপ চাওয়া মাধ্যমে যেনো এই রাতটি ক্ষমা চাইতে চাইতে কাটিয়ে দিতে পারি।

আমাদের প্রতিদিনই এমন চিন্তা করা উচিত যে গতকালকে কিভাবে আমার দিনটি কাটিয়েছে এবং আগামীকালের দিনটা কিভাবে কাটাবো। এই চিন্তা করে যখন একটা মুসলমান ঘুমাবে তখন তার মধ্যে একজন পরিপূর্ণ ঈমানদার মুসলিম হিসেবে মৃত্যুবরণ করতে পারবে। তাই আমরা এই থার্টি ফার্স্ট নাইটকে সুন্দরভাবে আমলের মাধ্যমে পাঠাবো এবং আমাদের আমলগুলো কোনভাবেই খ্রিস্টানদের সাথে সদস্য না হয়ে যায় শয়তানের পথে না চলে যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখবো আমার প্রিয় পাঠকরা।

লেখকের শেষ কথা 

আশা করি আপনারা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যে থার্টি ফার্স্ট নাইট সম্পর্কে ইসলাম কি বলে। থার্টি ফার্স্ট নাইট নিয়ে আমাদের সমাজের যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে তা আসলে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণযোগ্য নয়। আজকের দিনে প্রায় সব দেশে থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে উৎসব আয়োজন করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো একজন মুসলিমের জন্য এই অনুষ্ঠানে কি বৈধ এর জবাব কিন্তু স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে এই আর্টিকেলে মধ্যে ইসলামের জন্য এটা একদমই বৈধ নয়। ইসলাম আমাদের জন্য দুইটি ঈদ নির্বাচন করেছেন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। 

আরো পড়ুনঃ মাচের কত তারিখে ঈদ আরবিতে জেনে নিন 

প্রিয় পাঠকগণ আমাদের একটি বছর চলে যাওয়া মানে হলো আমাদের জীবনের মূল্যবান সময়ও শেষ হয়ে যাওয়া প্রতিদিন আমাদের মৃত আখড়াদের দিকে এগিয়ে যেতে হচ্ছে তাই এই সমাজে সব ও তো সমালোচনায় উপলক্ষ বানানোই একজন ঈমানদার মুসলমানের প্রকৃত দায়িত্ব। প্রিয় ভাই ও বোনেরা আসেন নতুন বছর শুরু করি নামাজ, রোজা, দোয়া, ভালোবাসা ও সৎকর্মের  মাধ্যমে। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আল্লাহাফেজ।





এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নাইস-সল্ভ; আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url